বাংলা ছবির নাম কেন ইংরেজি

বাণিজ্যিক সিনেমার আলোচিত পরিচালক মালেক আফসারী নতুন একটি ছবির ঘোষণা দিয়েছেন। টেনশন নামে ছবিটির শুটিং ঈদের পর শুরু করবেন বলে জানিয়েছেন তিনি। হ্যাকার নামেও একটি ছবির পরিকল্পনা করেছিলেন আফসারী। গত বছর পাসওয়ার্ড হিট হওয়ার পর এ ছবি নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়। লক্ষ করে দেখুন, পরিচালকের প্রতিটি ছবির নাম ইংরেজি। আফসারী একা নন, ইন্ডাস্ট্রির অনেকেরই ইংরেজি নামের প্রতি দুর্বলতা বেড়ে গেছে।

নায়ক ও প্রযোজক অনন্ত জলিলের অধিকাংশ ছবির নাম ইংরেজি। তাঁর অভিনীত দুটি আলোচিত ছবি খোঁজ দ্য সার্চ ও মোস্ট ওয়েলকাম। শাকিব খানের ছবির নামেও ইংরেজি এসেছে। ডেয়ারিং লাভার, সুপারহিরো, হিরো দ্য সুপারস্টার ছবির কথা বলা যায়। আর পাসওয়ার্ড তো রয়েছেই। বাপ্পী অভিনয় করেছেন আই ডোন্ট কেয়ার, লাভার নাম্বার ওয়ান ছবিতে। আরিফিন শুভ অভিনীত ছবি ঢাকা অ্যাটাক, মিশন এক্সট্রিম–এর নামও ইংরেজি।

ইংরেজি নামের প্রতি সচেতনভাবেই ঝুঁকেছেন বলে প্রথম আলোকে জানালেন মালেক আফসারী। তাঁর মতে, যুগের হাওয়ার সঙ্গে তাল মেলাতেই তিনি ইংরেজি নাম বেছে নিচ্ছেন। ‘মূলধারার সিনেমায় ছবির নামটা হতে হবে আকর্ষণীয়। পাসওয়ার্ড নামটা যুগোপযোগী। এক বছরে ৫০টি ছবির মধ্যে এটিই হিট হয়েছে। এ রকম নামই এখন দর্শকদের পছন্দ,’ বলছেন আফসারী।
ক্ষমা, ঘৃণা, গীত, ক্ষতিপূরণ ছবির পরিচালকের মুখে এমন কথা কেন? ‘ওসব নামের ছবি এখন মুক্তি পেলে চলত না। যুগ পাল্টেছে। দর্শকের রুচি পাল্টেছে। একজন রিকশাওয়ালা অবলীলায় বলে ফেলে—এই টেনশন আর ভাল্লাগে না! ফেসবুকে ঢুকতে গেলে পাসওয়ার্ড লাগে। এর বাংলা কিন্তু কেউ জানে না। আইডি হ্যাক হওয়ার ভয় করে সবাই। “হ্যাকার” ছবির নাম হতেই পারে,’ ইংরেজি নামের প্রতি যুক্তি দেখান আফসারী।

পরিচালক সাফিউদ্দিন সাফিও গেল সপ্তাহেই সিক্রেট এজেন্ট ছবির শুটিং শেষ করলেন। তাঁর নির্মিত শেষ কয়েকটি ছবিতে বাংলা নাম পাওয়া যায়নি। হানিমুন, ওয়ার্নিং, বিগ ব্রাদার, ব্ল্যাক মানি, মিসডকল নাম রাখার পেছনে ব্যাখ্যা রয়েছে সাফির। ‘আমার ছবিগুলোর ইংরেজি নাম গল্পের সঙ্গে মানানসই বলেই এসেছে। নামগুলোর বাংলাও হয় না। হানিমুন–এর কী বাংলা দেব আমি!’
চলতি মাসের শুরুতে ওয়াজেদ আলী মহরত করেছেন ব্লাড ছবির। অনন্য মামুন নির্মাণ করছেন মেকআপ ও সাইকো। সৈকত নাসির ব্যস্ত ক্যাসিনো নিয়ে। শামীম আহমেদ শুরু করছেন কমান্ডো। এই পরিচালকের মেন্টাল ছবিটি তিন বছর আগে সেন্সর বোর্ডে গেলে নাম পাল্টে হয়েছিল রানা পাগলা। ভক্তরা ক্ষুব্ধ হয়েছিলেন সেই ঘটনায়। সে সময় সেন্সর বোর্ড ইংরেজি নামের প্রতি সহনশীল ছিলেন না। ২০১৪ সালে সেন্সর বোর্ড এক প্রজ্ঞাপন জারি করে। সেখানে নির্মাতাদের জন্য সুখকর কোনো বার্তা ছিল না।
প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছিল, ‘সাম্প্রতিককালে অনাবশ্যকভাবে বাংলা সিনেমার নাম ইংরেজিকরণের প্রবণতা পরিলক্ষিত হচ্ছে। ঢালাওভাবে বাংলা চলচ্চিত্রের ইংরেজি নামকরণ বাংলাদেশের নিজস্ব সংস্কৃতি, ইতিহাস ও ঐতিহ্যের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ নয়। এসব বিষয় বিবেচনা করে চলচ্চিত্রের নামের ছাড়পত্র প্রদানের ক্ষেত্রে বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতির অনুসরণ নিশ্চিতকল্পে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হলো।’

সেন্সর বোর্ড এখন যথেষ্ট শিথিল। ইংরেজি নামের ব্যাপারে খুব একটা বাছবিচার করছেন না বোর্ড। বোর্ডের উদারতায় বাংলা নামের ছবি কমে যাচ্ছে। নির্মাতারা ঝুঁকছেন ইংরেজি নামের দিকে। এ প্রসঙ্গে সেন্সর বোর্ডের সদস্য ও পরিচালক সমিতির সভাপতি মুশফিকুর রহমান বলেন, ‘ইংরেজি নাম দিয়ে অশ্লীল ছবি হতো একসময়। এটা সেন্সর বোর্ডের নজরে পড়েছিল। তখনই নির্দেশনা আসে ইংরেজি নাম না রাখার। এখন যুক্তিসংগত হলে সেন্সর বোর্ড ইংরেজি নামে আপত্তি করে না। পরিচালক সমিতিতে নাম অন্তর্ভুক্তির সময় আমরা পরিচালকদের পরামর্শ দিই, ইংরেজি নাম না রাখতে।’
শ্রুতিমধুর বাংলা নামের দিক থেকে নির্মাতারা মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন বলা যায়। তারই মধ্যে বিক্ষোভ, আনন্দ অশ্রুর মতো নামগুলো ফিরে আসছে। ইংরেজি নামের জোয়ারে বাংলা নামকে আঁকড়ে আছেন কেউ কেউ। আনন্দ অশ্রুর পরিচালক মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ইংরেজি নাম গল্পের প্রয়োজনে হতেই পারে। তবে অনেকেই ইংরেজি নাম রাখাটাকে ‘স্মার্টনেস’ মনে করেন।

     আরো পড়ুন....

পুরাতন খবরঃ

শনি রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র
 
১০১১১২১৩১৪১৫
১৬১৭১৮১৯২০২১২২
২৩২৪২৫২৬২৭২৮২৯
৩০  
error: ধন্যবাদ!